শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫১ পূর্বাহ্ন
ভিশন বাংলা ডেস্ক: করলা স্বাদে তিতা হলেও স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারি। ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে করলার ভেষজ গুণ বেশি। জ্বর ও শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে সে ক্ষেত্রে করলা ভালো পথ্য। তা ছাড়া করলার তরকারি বায়ুবৃদ্ধিতে, বাতে, লিভারে ও প্লীহার রোগে এবং ত্বকের অসুখে উপকার দেয়। নিয়মিত খেলে এটি জ্বর, হাম ও বসন্ত হওয়ার আশঙ্কা কমিয়ে দেয়। করলা এ উচ্ছে আকারে বড় ও ছোট হলেও গুণের দিক থেকে একই। তাই ভেষজ হিসেবে ব্যবহারের কথা উভয়ের ক্ষেত্রে একসাথে দেয়া হলো।
করলা
করলা ২০ রোগের ওষুধ হিসাবে কাজ করে!
বাতরক্ত :-এ ক্ষেত্রে চার চা-চামচ করলা বা উচ্ছে পাতার রস একটু গরম করে সেই সাথে এক-দেড় চা চামচ বিশুদ্ধ গাওয়া ঘি মিশিয়ে ভাতের সাথে খেতে হয়।
পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত রোগ : অনেক সময় ম্যালেরিয়া জ্বরেও পিত্ত শ্লেষ্মার বিকার হয়। এর প্রধান উপসর্গ হলো, শরীর কামড়ানি, পিপাসা ও বমি; এ ক্ষেত্রে উচ্ছে বা করলার পাতার রস এক চা চামচ একটু গরম করে অথবা গরম পানির সাথে মিশিয়ে সারা দিনে ২-৩ বার করে খেলে জ্বরের উপসর্গগুলো চলে যাবে ও জ্বরের প্রকোপও কমে যাবে।
গুঁড়ো কৃমি এ ক্ষেত্রে উচ্ছে বা করলার পাতার রস বয়স্ক হলে ১-২ চা চামচ এবং শিশু হলে আধা চা চামচ সকালে ও বিকেলে অল্প পানি মিশিয়ে খেতে হয়।
প্লীহা রোগের উপক্রম হওয়া : এ রোগের লক্ষণ হলো বিকেলে চোখ-মুখ জ্বালা করা, নাক-মুখ দিয়ে গরম নিঃশ্বাস-বের হওয়া, মুখে স্বাদ না থাকা। নোনা স্বাদ ও ভাজাপোড়া জিনিসে রুচি বেশি এ ক্ষেত্রে বুঝতে হবে, রক্তবহ স্রোত দূষিত হচ্ছে এবং এর আধার প্লীহা বিকারগ্রস্থ হচ্ছে। এ সময় করলা বা উচ্ছে পাতার রস দুই চা চামচ একটু গরম করে সিকি কাপ পানিতে মিশিয়ে দিনে দু-তিন বার খেতে হয়। এভাবে পাঁচ-ছয় দিন খেলে অসুবিধাগুলো আস্তে আস্তে চলে যাবে।
বাত : পিত্ত শ্লেষ্মাজনিত এ বাত রোগের লক্ষণ হলো অমাবস্যা, পূর্ণিমা এবং একাদশী এলে হাত-পা-কোমর, সারা শরীরে ব্যথা যন্ত্রণা হয়; ব্যথা নিবারক বড়ি খেয়ে চলাফেরা করতে হয়; শীতকাল এলে কথাই নেই, তবে গরম বেশি পড়লে ব্যথা-বেদনা ও যন্ত্রণা একটু কম হয়। এ ক্ষেত্রে করলা বা উচ্ছে পাতার রস ৩ চা চামচ গরম করে অল্প পানিতে মিশিয়ে দিনে ২ বার করে খেলে এ অসুবিধা চলে যায়।
অরুচি রোগ : বৈদিক শাস্ত্র মতে, পিত্ত শ্লেষ্মার বিকার না হলে অরুচি রোগ হয় না। এ ক্ষেত্রে এক চা চামচ করে ফলের রস সকাল ও বিকেলে খেলে দোষটা চলে যায়।
রক্তপিত্ত : যাদের কোনো জ্বালা-যন্ত্রণা ছাড়াই পায়খানার সাথে টাটকা রক্ত পড়ে, অথচ অর্শ্বরোগ নেই এ ক্ষেত্রে রক্ত পিত্ত যে আছে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। এতে করলা বা উচ্ছের ফুল ৮-১০টা নিয়ে দিনে ৩ বার খেতে হয়। পুরাতন বৈদ্যরা ফুলের রস আধা চা চামচ করে খাবার বিধান দিতেন।
অগ্নিমান্দ্য : বীজ বাদ দিয়ে পুরো শাঁসের রস ছেঁকে একটু গরম করে প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খেলে অগ্নিমান্দ্য রোগ সেরে যায়।
এলার্জি :এ ক্ষেত্রে ফলের রস ২ চা চামচ করে দিনে ২ বেলা খেতে হয়।
দুষ্ট ক্ষত : যে ঘায়ে রস গড়ায় কিছুতেই শুকাতে চায় না এতে গাছ পুরোটা শুকিয়ে গুঁড়ো করে ঘায়ের ওপর ছিটিয়ে দিলে এবং গাছ সিদ্ধ পানি দিয়ে ধুয়ে দিতে থাকলে কয়েক দিনেই তা শুকিয়ে যাবে।
আধকপালে মাথাব্যথা :পাতার রস রগড়ে নিয়ে একটু ন্যাকড়ায় পুরে যে দিকে যন্ত্রণা হচ্ছে সে নাকে রসটা ফোঁটায় ফেলে টানলে কয়েক মিনিটেই ব্যথা সেরে যায়।
ভিটামিনের অভাব : পাকা করলা বা উচ্ছের বীজ শুকিয়ে রেখে প্রতিদিন প্রায় ১ চা চামচ (৩/৪ গ্রাম) মাখনের মতো বেটে তাতে ৭/৮ চা চামচ পানি মিশিয়ে চা ছাঁকনিতে ছেঁকে সে পানি প্রতিদিন একবার করে খেতে হয়। তাতে এ অভাব পূরণ হবে। এটি পুরনো কালের ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স।
শিশুদের বমি : তিনটি করলা বিচি ও তিনটি গোলমরিচের গুঁড়ো সামান্য পানি মিশিয়ে খেলে শিশুর বমি বন্ধ হয়।
মূত্রকৃচ্ছ্রতা (প্রস্রাব বন্ধ হওয়া) : ১০ চা চামচ করলা পাতার রস একটু হিংসহ খেলে এ রোগ সারে।
অর্শ্ব : করলার পাতা বা ফলের রস এক চা চামচ অল্প চিনিসহ খেলে অর্শ্ব ও তা থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
চর্মরোগ :করলা পাতার রস মালিশ করলে চর্মরোগ সারে। তা ছাড়া এ রস শুকনো ত্বকের জন্য উপকারি। শিকড় পিষে চুলকানি ও ফুসকুঁড়িতে লাগলে তা সারে।
আগুনে পোড়া : পোড়া ঘায়ে করলা পাতার রস লাগালে তা সারে।
রক্তদুষ্টি : করলার রস খেলে রক্তের দূষিত বর্জ্য বের হয়ে যায়।
ডায়াবেটিস :
ক. প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়মিত করলার রস খেলে ও খাওয়া-দাওয়ার নিয়ম মেনে চললে এ রোগ সারে।
খ. তেতো বের না করে তরকারি হিসেবে ভাজি, ভর্তা হিসেবেও খেলে রোগ সারে।
গ. কচি করলা টুকরো করে কেটে ছায়ায় শুকিয়ে নিয়ে মিহি করে পিষে নিতে হবে। এ গুঁড়ো সকাল ও সন্ধ্যায় নিয়মিত দুই চা চামচ করে চার মাস খেলে এ রোগ নিশ্চয় সারবে। তবে নিয়মকানুন মানতেই হবে। এতে প্রস্রাবের সাথে শর্করা বের হওয়া একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
ঘ. একটি করে শসা, টমেটো ও করলা নিয়ে রস বের করে সকালে খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায়।